

সম্পাদক পরিচিতি
নারীচিন্তার খন্ড সমূহ
প্রথম খন্ডে সংকলিত হল উনিশ শতকের সেই গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের রচনা, যাঁরা প্রবলভাবে সক্রিয় ছিলেন সমাজ-সংস্কার ও ধর্ম-সংস্কার আন্দোলনে। সচেষ্ট ছিলেন বিপন্নপ্রাণ ও জীবনহীন বাঙালি নারীর প্রাণ ও জীবন নিশ্চিতকরণে। প্রবন্ধের পর প্রবন্ধে তাঁরা স্পষ্ট করে তুলেছেন নারীর দুর্দশাকে, বোধশূন্য পুরুষের সমাজকে ধাক্কা দিয়ে জাগ্রত ও বোধসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে চেষ্টা চালিয়েছিলেন। রচনাগুলো আধুনিককালের বাঙালি মানসের নারীভাবনার পরিচয়ই শুধু দেয় না; জানিয়ে দেয় আলো ও অন্ধকারের লড়াইয়ের তীব্রতাকেও।
দ্বিতীয় খন্ডের প্রবন্ধগুলোর রচনাকাল ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথম তিন দশক। এ খন্ডের বড় অংশই নারীর রচনা। কয়েকটি প্রবন্ধের লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় - যেগুলোতে তিনি নারীর জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্থির করে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন। স্বর্ণকুমারী দেবী তীব্রকণ্ঠেই জানিয়ে দিয়েছেন নারীর সফল ‘হওয়া’কে কীভাবে রুদ্ধ করেছে পুরুষের সমাজ ও সংসার। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন তাঁর রচনায় নিরাবরণ করে তুলেছেন বাঙালি সমাজ ও ভারতবর্ষের মুসলমান সমাজে অবরুদ্ধ নারীর জীবনের রূপ।
তৃতীয় খন্ডের সংকলিত হয়েছে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রবন্ধগুলো, যাতে প্রকাশ পেয়েছে রোকেয়ার গভীর নারীভাবনা। তাঁর সমাজের ঘরে ঘরে নারী আছে কোন্ ভূমিকায়? রোকেয়া দেখিয়েছেন, নারী আছে নানারকম দাসত্বে - কখনো মূর্খতার শৃঙ্খলে বন্দি, কখনো পুরুষকর্তাদের এঁটে দেওয়া ঠুলি নিয়ে অন্ধ-অনুগমনের দাসত্বে, কখনো লোভ ও অজ্ঞতার দাসত্বে; কখনো অপবিশ্বাস, অপসংস্কার ও অধর্মের দাসত্বে কাটছে তার জন্ম। দাসত্বের রূপটি রোকেয়া বিশদভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন ব্যাখ্যা, ভাষ্য ও উদাহরণ সহযোগে।
চতুর্থ খন্ডের লেখাগুলোর বড় অংশেরই রচনাকাল বিশ শতকের শেষ দুই দশক। অল্প কয়েকটি নিবন্ধ রচিত ও প্রকাশিত হয়েছে একুশ শতকের প্রথম দুই দশক সময়পর্বে। আমরা দেখব, নারীভাবনার জগৎটি এখন অনেক বিসতৃত হয়ে উঠেছে। নারীর বর্তমান আর্থ-সামাজিক-রাষ্ট্রিক অবস্থাটি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নে যেমন এখন নারীমিত্রগণ তৎপর, তেমনি বিগত শতকগুলোর নারীকল্যাণকামী নানা পদক্ষেপকে নতুন করে যাচাইকরণ ও ব্যাখ্যাদানেও তাঁরা গভীর মনোযোগী। এই সংকলনের নিবন্ধগুলোতে পুরুষতন্ত্রের নব নানা ষড়যন্ত্রের স্বরূপটিও উদ্ঘাটনের প্রয়াস আমরা লক্ষ করি।