Arthoniti Chinta
Arthoniti Chinta

আমাদের কথা

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কোনো গৎ—বাঁধা, ছক—কাটা, প্রাণহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি সপ্রাণ সজীব পরিবেশ— জ্ঞান ও জীবন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে পূর্ণতর মনুষ্যত্বে ও উন্নততর আনন্দে জেগে ওঠার এক অবারিত পৃথিবী। এক কথায়, যাঁরা সংস্কৃতিবান, কার্যকর, ঋদ্ধ মানুষ— যাঁরা অনুসন্ধিৎসু, সৌন্দর্যপ্রবণ, সত্যান্বেষী, যাঁরা জ্ঞানার্থ, সক্রিয়, সৃজনশীল ও মানবকল্যাণে সংশপ্তক 'বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র' তাঁদের পদপাতে, মানসবাণিজ্যে, বন্ধুতায়, উষ্ণতায় সচকিত একটি অঙ্গন।

আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে, গ্রিসে, পেরিক্লিসের আমলে, এথেন্সের যুবকদের আঠারো বছরে পদার্পণ উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে একটি শপথবাক্য উচ্চারণ করতে হত। সবার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে হত, 'আমি সারাজীবনে এমন কিছু করে যাব যাতে জন্মের সময় যে-এথেন্সকে আমি পেয়েছিলাম মৃত্যুর সময় তার চেয়ে উন্নততর এথেন্সকে পৃথিবীর বুকে রেখে যেতে পারি।' আমাদের চেষ্টাও তেমনি এক উন্নততর বাংলাদেশের জন্য।

বড় মানুষ, সম্পন্ন-মানুষেরাই শুধু পারে একটি বড় দেশ আর বড় জাতিকে গড়ে তুলতে। আমাদের সামনে আগামীদিনের যে মহান বাংলাদেশ অপেক্ষমাণ তার সুযোগ্য নির্মাণের জন্য আজ আমাদের প্রয়োজন অনেক সমৃদ্ধ মানুষের। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মানবসভ্যতার শ্রেষ্ঠ বইগুলো নিয়মিত পড়ানোর ভেতর দিয়ে দেশের মানুষের চেতনা জগৎকে বড় করে তোলার উদ্দেশ্যে নানান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। আমরা জ্ঞানচর্চাকে সারাদেশের প্রতিটি অঙ্গনে ছড়িয়ে দিতে চাই। ভাল বইপড়ার মাধ্যমে সারা দেশের মানুষের পাঠাভ্যাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ অব্যহত রেখেছে।

যখন আমরা 'আলোকিত মানুষ' কথাটা বলি তখন সেই মানুষদের স্বপ্নই হয়তো দেখি, যাঁদের হৃদয়, রেনেসাঁ-মানবদের মতোই, জগতের বহুবিচিত্র জ্ঞান ও বোধের আলোয় প্রজ্বলিত-সেইসব মানুষ যাঁরা মানবজ্ঞানের নানান শাখার সোনালি স্পর্শে, ঐশ্বর্যে ও সৌন্দর্যে কমবেশি দীপান্বিত ও কান্তিমান।

এই আলোকায়নের একটি প্রয়াস হিশেবে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র হাতে নিয়েছে জাতীয় জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্মসূচি , “বাঙালির চিন্তামূলক রচনা সংগ্রহ ”।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রকাশনার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হল বাঙালির চিন্তা কর্মসূচি। এই কর্মসূচির আওতায় গত দুশো বছর ধরে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ মনীষীরা শিক্ষা, ধর্ম, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, দর্শন, শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি, সমাজ ইত্যাদি ১৬টি বিষয়ে যেসব মৌলিক চিন্তা করেছেন সেগুলোকে ব্যাপকভাবে সংগ্রহ ও বাছাই করে প্রতিটি বিষয়ের শ্রেষ্ঠ রচনাসম্ভারকে বহু খন্ডে প্রকাশ করার আয়োজন শেষ হয়েছে। দুশতাধিক খন্ডে প্রায় ৬৮,০০০ পৃষ্ঠার এই মহাগ্রন্থমালা যা সমকালীন এবং ভবিষতের অনুসন্ধিৎসু পাঠক ও গবেষকদের জন্য প্রয়োজনীয় সংকলন হিসেবে ব্যাবহৃত হবে |