Arthoniti Chinta
Arthoniti Chinta

সম্পাদক পরিচিতি

পরিবেশচিন্তার খন্ড সমূহ

প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার তাগিদ সৃষ্টি এবং পরিবেশের পরস্পর-নির্ভরতার জীবনবোধ জাগিয়ে তুলতে বাঙালির পরিবেশচিন্তার প্রথম খ-ের লেখাগুলো উপযোগী হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

বিজ্ঞানমুখী শিক্ষার বিস্তার, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সঙ্গে ক্রমশ  নিবিড় যোগাযোগ বেড়ে চলার ফলে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, ভূগোল, জ্যোতির্বিদ্যা বা জীববিদ্যার বিষয়গুলো এখন কেবল আয়ত্ত করা নয়, এর নানাবিধ ব্যবহারিক দিকের সঙ্গেও শৈশবেই পরিচিত হতে হয়। বাংলাভাষায় প্রাঞ্জল বর্ণনা ও ব্যাখ্যায় দেশজ অভিজ্ঞতা ও পটভূমির ওপর ভিত্তি করে যে প্রকৃতিবিদ্যার চর্চা, তারও বিকল্প নেই। সে পটভূমিতে পরিবেশ ও বিজ্ঞানের চর্চাকে প্রাঞ্জল বাংলায় এগিয়ে নিতে আবদুল্লাহ আল-মুতীর লেখাগুলো খুবই প্রাসঙ্গিক।

যন্ত্রের সভ্যতাকে দোষারোপ না করে যন্ত্রের মতো মানসিকতাকে দোষারোপ করতে চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ভোগবাদী যান্ত্রিক সভ্যতার সাথেই যে পৃথিবীর পরিবেশ-সংকটের মূলসূত্রটি গ্রথিত, সে সত্যের সঙ্গে পরিচয়ও তিনিই আমাদের করিয়ে দিয়েছেন। পৃথিবীর গভীরতর অসুস্থতার সঙ্গে প্রযুক্তির ভারসাম্যহীন সমাবেশ ও আধুনিকতার নামে নিস্পৃহ উন্নয়ন-ইচ্ছের দ্বিধাহীন সম্পর্কের সূত্রটিও ফুটে উঠেছে প্রকৃতি ও নান্দনিকতার মনোগ্রাহী চিত্রকর দ্বিজেন শর্মার লেখাগুলোতে। সৈয়দ নাজমুদ্দীন হাশেমের পাখিদের নিয়ে স্মৃতিচারণ এবং প্রকৃতিঘনিষ্ঠ পরিবেশ-সচেতন মন নিয়ে বাংলার নদীতীর, জলাজঙ্গল পরিভ্রমণ--প্রকৃতি ও পরিবেশের সম্পদ এবং সৌন্দর্য দুটোই মুঠোভরে বিলিয়ে দেন তাঁর শক্তিশালী লেখায়।

এ খ-ের লেখাগুলোতেও শক্তিমান চিন্তাবিদ ও গবেষকদের সংবেদনশীল ভাবনাগুলোর ভেতর দিয়ে বাঙালির পরিবেশ-সচেতনতার ভিত্তি কীভাবে দৃঢ় হয়েছে সে-চিত্রটি ফুটে উঠেছে। আমাদের বন, জলাধার, মাটি, সবুজ ক্ষেত্র জ্বালানি ও  খাদ্যের যোগান দিতে, মানুষের নানামুখী প্রয়োজন মেটাতে দ্রুত সংকুচিত হচ্ছে, দূষণে ভারাক্রান্ত হয়ে পরিবেশে সতর্কতার ঘণ্টাধ্বনি শোনাচ্ছে--সংকলিত লেখাগুলো তার দলিল। একই সঙ্গে পরিবেশ-সংকট মোকাবেলার বিষয়গুলো কেবল স্থানিক নয়, এর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পটভূমি বর্ণিত হয়েছে বেশক’টি লেখায়। সম্পদের যৌক্তিক ও কল্যাণকর ব্যবহারের তাগিদও একইভাবে উচ্চারিত হয়েছে। যুদ্ধ ও ধ্বংসের প্রস্তুতিতে পৃথিবীর সম্পদ যত অনায়াসে অপচয় হচ্ছে তার সামান্য অংশও যদি ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচন, কল্যাণকর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে ব্যবহার করা যেত তাহলে পৃথিবী থেকে অনেক দ্রুত অকল্যাণের দুর্ভোগ হ্রাস করা সম্ভব হত। নতুন বিশ্ব-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়বার তাগিদ, সম্পদের যৌক্তিক ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহার এবং বণ্টনের তাগিদও সে পটভূমিতেই আলোচিত হয়েছে। সামরিক প্রতিযোগিতার বিপদ ও সম্পদের অপচয় থেকে নিরস্ত্রীকরণ ও পারস্পরিক সহযোগিতার বিরোধমুক্ত সৌহার্দ্যরে বিশ্ব গড়বার তাগিদের সঙ্গে পরিবেশের সম্পদ সংরক্ষণ, দূষণরোধ ও মানুষের সৃষ্টিশীল পৃথিবীকে বিকশিত করবার সামর্থ্যকে এগিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাও জোরেশোরে তুলে ধরা হয়েছে। এজন্য বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ও পরিকল্পিত উন্নয়নকৌশল অন্যতম প্রয়োজনীয় বাহন। পরিবেশ-সচেতন নতুন চেতনার মানুষও সে-কারণে দরকার। 

এ খ-ের অন্যান্য লেখাগুলো নদী ও বাংলার পরিবেশদূষণের বিভিন্ন ধরন ও তার প্রভাব নিয়ে। বাংলার সৃষ্টি, বিকাশ ও জীববৈচিত্র্য, জীবনাচার নদীকেন্দ্রিক। নদী ও তার অববাহিকার বাংলায় পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করে নদীর পরিবেশ ও প্রবহমানতা। নদীর জলের সুস্থতা, স্রোতধারার অবিরাম প্রবাহ বিঘিœত হলে নদী শুকিয়ে বা মরে গেলে নদীপাড়ের জীবন ও পরিবেশে যে বিপন্নতা অবধারিত, তারই নানামুখী পর্যালোচনা সন্নিবেশিত হয়েছে ‘নদী ও বন্যা’, ‘আমাদের নদী : আমাদের প্রাণী’, ‘নদনদীর জীববৈচিত্র্য’, ‘সুন্দরবনের নদী’ এবং ‘নদীর মৃত্যুঘণ্টা’ শিরোনামের লেখাগুলোতে।

বিষয়-বিভিন্নতা সত্ত্বেও সবগুলো আলোচনারই অভিন্ন সুর, সুবিন্যস্ত পরিবেশ-শৃঙ্খলা ও সম্পদের যৌক্তিক এবং সহনশীল আচরণ, ব্যবহার, পরিবেশ-সংরক্ষণের পূর্বশর্ত। কখনো এ আলোচনায় মনস্তাত্ত্বিক বিরোধ, কখনো অনুভবের ভিন্নতা এবং প্রকৃতি-শাসনের প্রলুব্ধ আহ্বান বাদ সেধেছে। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারক হয়েছে সময় এবং বিশ্ববোধ। পরিবেশে বিচ্ছিন্নভাবে কেউ উন্নতি-প্রয়াস চালিয়ে অন্যের অধিকার সংকুচিত করার সাময়িক সুবিধা নিতে পারে। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে তা যেহেতু দেশ-কাল সীমানার বাধা অতিক্রম করে জাগতিক বিপর্যয়ের কারণ হয়, তা বুঝতে খানিক সময় অপেক্ষা করতে হয় মাত্র। পৃথিবীর উষ্ণায়ন ও গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের স্ফীতি, আবহাওয়া-ম-লীর পরিবর্তন, ঝড়-বৃষ্টি-প্লাবনের পরিমাণ ও তীব্রতা বৃদ্ধি সে সতর্ক-সংকেত জানিয়ে দিচ্ছে। যান্ত্রিক ও কারিগরি অগ্রগতির বরাতে সভ্যতার কেন্দ্র, অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেন্দ্র বলে অনেক নগরসভ্যতা পরিবেশের বিবর্তনে গুরুত্বহীন বলে অতীতে যেমন প্রমাণিত হয়েছে, আগামীতে গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়ায় তেমনটি হতে পারে বলে বাস্তব আশঙ্কা আবারও দেখা দিয়েছে। যে অঞ্চলে বরফ-আচ্ছাদন ভূমি-ব্যবহার সীমিত করেছে, সেখানে অনুকূল আবহাওয়া নিশ্চয়ই সমৃদ্ধির চাকাকে ঘুরিয়ে দেবে। একইভাবে প্রতিষ্ঠিত অন্য অনেক অর্থনীতিকে সংকটে ফেলে দিতে পারে। এভাবে সভ্যতার কেন্দ্র-বদল কেবল তাত্ত্বিক আলোচনা নয়, এখন জীবন্ত বাস্তবতা। এ বাস্তবতাকে মোকাবেলা করতে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ও কৌশলকে পরিবেশবান্ধবভাবে ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট। কিন্তু ভোগবাদী দর্শন যদি প্রযুক্তির চালিকাশক্তি হয় তাহলে কল্যাণকর আবিষ্কারও অব্যবহৃত থেকে যায়। সুবিন্যস্ত অর্থনৈতিক কাঠামো লক্ষ্যহীন যাত্রা করে মানুষের কল্যাণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অপারগ হয়। পরিবেশ-সচেতন মানুষের সে-কারণে আত্মিক প্রফুল্লতা ও প্রকৃতিঘনিষ্ঠ উন্নয়নের পক্ষাবলম্বনের বিকল্প নেই। 


বস্তুত উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণের দ্বান্দ্বিক অবস্থান এবং কৌশল নিয়ে মতভিন্নতা একটি বাস্তবতা। পরিবেশ নিয়ে যারা আন্দোলন করেন তাদের মধ্যে ভাবাদর্শ ও ভাবাবেগের পার্থক্যও স্পষ্ট। ইউরোপে পরিবেশ-আন্দোলন বা গ্রিন মুভমেন্ট যে মাত্রা এবং ভাবধারায় পরিচালিত তা-ও যে সুষম দার্শনিক তত্ত্বনির্ভর তা-ও নয়। এ ভাবধারার মধ্যে বহু মত ও আদর্শগত সংঘাত রয়েছে। প্রচলিত রাজনৈতিক ধারা ও নেতৃত্বের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে একশ্রেণির মানুষ পরিবেশবাদী আন্দোলনে বিকল্প খুঁজছে। গ্রিনদের দর্শনে অনেক অস্পষ্টতা ও অসম্পূর্ণতা সত্ত্বেও মানুষ গ্রিন-সংস্কৃতিকে একটি বিকল্প হিসেবে পর্যবেক্ষণ করছে। রক্ষণশীল, মধ্যপন্থি ও বিপ্লবী মতবাদগুলো পারস্পরিক সংঘাত সত্ত্বেও কিছু বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। একটা মত মোটামুটি এখানে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, গ্রিন মতবাদের ভাবাদর্শে সমাজের বিভিন্ন মতবাদ ও আদর্শগত ভিত্তিকে স্বীকার করে নিয়ে মতামতের ভিন্নতাগুলোকে একসাথে ধারণ করার প্রয়োজনীয় সহনশীলতা প্রদর্শন করতে হবে। কেবল একটিমাত্র দর্শন বা ভাবদর্শন দিয়ে সমাজের সব ঘটনাপ্রবণতাকে ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা এড়িয়ে চললে বরং সহনশীলতার পরিবেশ বিকশিত হয়।

আগ্রহোদ্দীপক পরিবেশ-আন্দোলনের বিভিন্ন ধারা, উপধারা ও তাদের মত, আন্দোলনের নানা উদাহরণ পর্যালোচনা করা হয়েছে। পরিবেশ-আন্দোলনে সক্রিয় নানা মতাদর্শের গোষ্ঠীগুলো নিজেদের নানা গোষ্ঠীগত স্বার্থ বিবেচনায় আন্দোলনে তাদের অবস্থানও পরিবর্তন করতে পারে। পরিবেশবাদীদের একাংশ রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি বা বহুজাতিক মালিকানার শিল্পকারখানা সব একই সূত্রে গাঁথা পরিবেশ-দূষক বলে বিবেচনা করে। অপরদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় দূষণকারী শিল্পের প্রতি নমনীয় অবস্থান নিয়ে ব্যক্তি ও বহুজাতিক মালিকানায় শিল্পকারখানার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনে উৎসাহী অপর একটি গ্রুপ। অন্যদলটি সবকিছুর মধ্যে সমাজতন্ত্রই একমাত্র সমাধান মনে করে। অন্যদিকে কোনো একটি গ্রুপের শিল্প-উদ্যোগের প্রতি সমর্থন বা মৌনসমর্থন জানিয়ে অন্য গোষ্ঠীর প্রতি বিরোধিতা করার মতো সুবিধাবাদী পরিবেশ-আন্দোলনের উদাহরণও বিরল নয়।

প্রকৃতি ও পরিবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গাছপালা তরুলতা। বাংলার অধিবাসীদের জীবনাচার ও চিন্তার ধারাকে লালন করা এবং প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে বাংলার প্রকৃতিতে গাছপালা, তরুলতা, পশুপাখি কীটপতঙ্গের প্রভাব ব্যাপক। বিশ্বজুড়ে সকল সভ্যতার জন্যই বিষয়টি বাস্তব। তবে বাঙালির পরিবেশচিন্তার ধারা বুঝতে বাঙালির মানসগঠনের উপাদান ও পূর্বশর্তগুলো জানা প্রয়োজন। 

লেখাগুলোতে অন্যতম আলোচ্য উপাদান পাখি। তাছাড়া বিপন্ন বাঘ, সমুদ্র ও দ্বীপাঞ্চল, বর্জ্য ও আর্সেনিক দূষণ। পরিবেশের অন্যতম আকর্ষণীয় সদস্য পাখিদের নিয়ে বিভিন্ন ভাবনার প্রতিফলন সংকলিত হয়েছে। মানুষের সবচেয়ে প্রাচীন পোষমানা প্রাণী কুকুর নিয়ে বিশ্বসাহিত্যে প্রায় দশ লক্ষ বই রচিত হলেও আমাদের বাংলা সাহিত্যে এদের সংখ্যা এমন কিছু উল্লেখযোগ্য নয়। কুকুরের বিভিন্ন তথ্য, ভালোবাসার কথা ও নিজ অভিজ্ঞতার সমৃদ্ধ ভা-ার অবলম্বনে দ্বিজেন শর্মার ‘আদি সখা চিরসখা’ লেখাটি এ সংকলনে সে বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ। 

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পরিবেশ ও প্রাকৃতিক ব্যবস্থার সম্পর্ক কতটা, সে সম্পর্কে এখনো অনেক অজানা বিষয় রয়ে গেছে। ইদানীং পরিবেশের অর্থনেতিক মূল্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে, একই সাথে সমাজের দরিদ্রতম অংশের মানুষের জন্য উদ্বেগ ও দীর্ঘমেয়াদি মানবকল্যাণের জন্য উদ্বিগ্ন মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। পরিবেশের অবক্ষয়ের অর্থনৈতিক মূল্য পর্যালোচনার পাশাপাশি অর্থনীতি টেকসই হওয়ার ক্ষেত্রে পরিবেশে তার প্রভাব নিরূপণের তাগিদও সৃষ্টি হয়েছে। পরিবেশ-বিষয়ক উপযুক্ত নীতি প্রণয়ন ও পরিবেশের মান বজায় রেখে আর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের উপায় খুঁজে বের করার তাগিদ সৃষ্টি হয়েছে। বিনিয়োগ বাড়ানো ও পরিবেশ সম্পদের ব্যবস্থাপনা উন্নত করা জরুরি। এ লক্ষ্যে কেবল নীতিপ্রণয়ন নয়, আন্তরিক অঙ্গীকার সহযোগে তার বাস্তবায়নও প্রয়োজন।


বাংলাদেশের মতো দেশে পরিবেশ-নীতি প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন করার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া একটি জটিল কাজ। এজন্য বিস্তারিত তথ্য, জ্ঞান-আহরণ ও প্রয়োজনীয় পদ্ধতিগুলো আয়ত্তে আনার বিরতিহীন চেষ্টা প্রয়োজন। সরকারের ভূমিকা এক্ষেত্রে ব্যাপক ও মুখ্য। জনসংখ্যার মারাত্মক চাপ, ভূমির সীমাবদ্ধতাসহ সম্পদের সীমাবদ্ধতা পরিবেশরক্ষার চ্যালেঞ্জকে প্রচ-ভাবে নিষ্পেষিত করছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও অভিজ্ঞতার উত্তরাধিকার সীমিত বা অনুপস্থিত হওয়ার কারণে কাজটি আরো জটিল। ইতোমধ্যে দেশে পরিবেশ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা অগ্রাধিকার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। উপরন্তু দেশে কিছু আইন, বিধিমালা ও নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। কিন্তু সবগুলো আইন, বিধি ও নীতিমালা বাস্তবানুগ নয়। অপরদিকে সেগুলো বাস্তবায়নের কার্যকর দিকনির্দেশনাও প্রায়শ অনুপস্থিত। 

‘বিপন্ন পৃথিবী বিপন্ন জনপদ’ নামের বড় গ্রন্থটির প্রবন্ধগুলোতে গণসংযোগকর্মী, লেখক তোফাজ্জল হোসেন পরিশ্রমী গবেষণালব্ধ তথ্য সংকলন করেছেন প্রচুর। 

যেহেতু পরিবেশের সমস্যাগুলো এখন বৈশ্বিক ও সমস্যাগুলোর মাত্রা ও পরিধি এককভাবে সমাধানের অতীত হয়ে সামনে আসছে, সুতরাং সমন্বিত কৌশল প্রণয়ন ও সম্মিলিত উদ্যোগে তা সমাধান ও ব্যবস্থাপনার দাবিও সামনে আসছে। দারিদ্র্য, জনসংখ্যা, বিশ্বের উষ্ণায়ন, মরুময়তার বিস্তার, পানীয়জলের সংকট, শিক্ষা ও সুযোগের সীমাবদ্ধতা, ওজোনস্তরের ক্ষয়রোধ ইত্যাদি বড়মাপের পরিবেশ-সংকটগুলোর কোনোটিই একক প্রচেষ্টায় সমাধান অসম্ভব। এজন্য ভৌত সম্পদ ও মেধার সমাবেশ করাও একক উৎসে অসম্ভব এবং অপ্রয়োজনীয়। যেহেতু পরিবেশ সংরক্ষণে স্বার্থ ধনী-গরিব, শিল্পোন্নত উন্নয়নশীল দেশ নির্বিশেষে অভিন্ন, সুতরাং সহযোগিতার পরিবেশ সম্প্রসারণে প্রাথমিক বাধাটি সহজেই অপসারণযোগ্য।

এ খ-ে সন্নিবেশিত ‘বিশ্বপরিবেশ সমস্যা ও বাংলাদেশ’ লেখাটিতে গবেষক লিয়াকত আলী সিদ্দিকী পরিবেশ-সংরক্ষণে বিশ্বপরিসরে বিভিন্ন সহযোগিতা, সংলাপ ও চুক্তি বিশ্লেষণ করেছেন। লেখক এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান এবং দেশের ভূমিকাবৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। 

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তাঁর স্মৃতির শহর ঢাকাকে গত প্রায় অর্ধশতক ধরে খুব কাছ থেকে দেখে যে উপলব্ধি জন্মেছে তার মনকাড়া বিবরণী দিয়েছেন তার ‘সুফলা ধরিত্রী’ শিরোনামের গ্রন্থটিতে। শান্ত নিরিবিলি ছোট শহরটি যেভাবে তাঁর সামনে বিশৃঙ্খল, বিপর্যস্ত, বিপন্ন মহানগরী হয়ে উঠল তার বিস্তারিত পর্যালোচনার সাথে সাথে পরিবেশ সম্মত মহানগরী গড়তে সচেতন আন্দোলন গড়ার আবশ্যিকতা তুলে ধরেছেন